সফিকুলরা বেঁচে আছে বলেই, বেঁচে আছে সাংবাদিকতা

Advertisement
Advertisement

জামিতুল ইসলাম, স্টিং নিউজ, কলকাতাঃ বহমান স্রোতের উল্টো দিকে কেউ না কেউ কখনও না কখনও সাঁতার কেটেছেন, এখনও সাঁতরে যান তাঁরা। হ্যাঁ, ব্যতিক্রম থাকেই। আর এই ব্যতিক্রমরাই হয়ে ওঠেন উদাহরণ, এনারাই হন ‘পথ প্রদর্শক’।একবিংশ শতকের এমনই এক ব্যতিক্রম অদম্য সাহসী নির্ভিক সাংবাদিক সফিকুল ইসলামের কথাই বলব।

বর্তমান যুগে পেটোয়া সাংবাদিকরা যখন শাসক সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে তোষণ করে নানান সুবিধা আদায় করছে সেখানে এ রাজ্যের শাসক দলের একের পর এক তোলাবাজি ও আরামবাগ থানা থেকে ক্লাব অনুদানের ছবি মানুষের সামনে ফাঁস করে সাংবাদিকতার জগতে নয়া রাজপুত্র হয়ে গিয়েছেন সফিকুল ইসলাম তা বলাই বাহুল্য ।সফিকুল ইসলাম আধুনিক সাংবাদিকতার জগতে সাহসের প্রতীক, বীর্যের প্রতীক ।

Advertisement

তিনি এক কলম- ব্যাঘ্র বললে বোধহয় অত্যুক্তি হবেনা। ২০১৩সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গে যখন চিট পরিচালিত মিডিয়ায় সাংবাদিকতার প্রতারণা সামনে আসে, বেশ কিছু সাংবাদিক প্রতারণার দায়ে জেলও খাটেন ঠিক তখন সাংবাদিকতার সাহসিকতায় সফিকুল এক আলোর ঝলকানি।এই সফিকুল ইসলাম হুগলির আরামবাগ মহকুমার আরামবাগ টিভি র মুখ্য পরিচালক।

তিনি এপ্রিল মাসে ওই আরামবাগ টিভি ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও ফুটেজ দেখান। তাতে বলা হয়েছিল, লকডাউনের মধ্যেও আরামবাগ থানা থেকে ক্লাবগুলিকে চেক বিলি করা হচ্ছে।তারপর থানা থেকে সফিকুল ইসলাম কে জিজ্ঞাসা করেন কিভাবে এই খবর পেলেন তার উত্তরে সংবাদ মাধ্যমের নিয়ম মেনে সাংবাদিক সফিকুল ইসলাম বলেন খবরের সোর্স বলতে রাজি নন ।কারণ এটা সংবাদ মাধ্যমের এথিক্স বিরোধী।প্রথমে পুলিশ অস্বীকার করলেও পরে কাগজে কলমে মেনে নেয় চেক বিলি হয়েছিল।তারপর আরামবাগ থানার পুলিশ সফিকুলের বিরুদ্ধে ভুয়ো খবরের মামলা থেকে বেশ কয়েকটি মিথ্যা মামলা সাজিয়ে এপ্রিল মাসেই রাত ১টায় এক দল পুলিশ বাহিনী সফিকুলকে গ্রেফতার করতে তার বাড়িতে যায়।সেদিন গ্রেফতার করতে না পেরে চলে আসে।

Advertisement

তারপর গোটা বিষয়টি নিয়ে সফিকুল ইসলাম সরাসরি কলকাতা হাই কোর্টে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সফিকুল ইসলামের অভিযোগ ছিল লকডাউন পিরিয়ডে আরামবাগ থানা থেকে ৫৭টি ক্লাব গুলিকে এক লক্ষ করে টাকা দেওয়ার খবর সম্প্রচার করা ও পুকুর চুরি হওয়া মানুষের সামনে তুলে ধরার কারণেই এই পুলিশ উঠেপড়ে লেগেছে তাঁকে জেলে পাঠাতে।কলকাতা হাইকোর্টে সফিকুলের এই মামলায় বিচারপতি দেবাংশু বসাক নির্দেশ দিয়েছিলেন, সফিকুলকে গ্রেফতার করা যাবে না। কিন্তু ২৯জুন একটি এফআইআর দায়ের হয় সফিকুল ও আরামবাগ টিভির সাংবাদিক সুরজের বিরুদ্ধে। তাতে বলা হয়, গাছ কাটা নিয়ে এক ব্যক্তিকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। অভিযোগকারী পুলিশকে বলেন, সুরজ তাঁকে হুমকি দেন, ৩০ হাজার টাকা না দিলে গাছ কাটার খবর ফাঁস করে দেবেন!

Advertisement

তাঁর বক্তব্য, তিনি সুরজকে বলেছিলেন পঞ্চায়েতের নির্দেশে গাছ কাটছেন। তাও টাকা চাওয়া হয়।এই অভিযোগে আরামবাগ থানার আই সি পার্থ সারথী হালদারের নেতৃত্বে এক দল পুলিশ বাহিনী ২৯জুন ভোর ৪টেই শফিকুলের বাড়ির গেট ভেঙে খুনির আসামিকে পুলিস যেভাবে গ্রেপ্তার করে তার চেয়েও খারাপ মনোভাব নিয়ে পুলিস সফিকুলকে গ্রেপ্তার করে। শিশু সুরক্ষা ও নারী সুরক্ষা আইনকে পদদলিত করে পুলিস সফিকুলের স্ত্রী ও দুই সন্তানকে গ্রেপ্তার করে আরামবাগ থানায় নিয়ে যায় । নানাভাবে পুলিস শারীরিক ও মানসিকভাবে তার ও তার পরিবারকে নির্যাতন করে।তারপর তাদের আরামবাগ মহকুমা আদালতে তোলা হলে আদালত তাদের ৭দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

এদিন সফিকুলের হয়ে আদালতে সওয়াল করেন সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “এই পুলিশ একেবারে তৃণমূলের ক্যাডারবাহিনীর মতো কাজ করছে। কোনও লাকলজ্জা নেই। সফিকুলের দুটি শিশু সন্তানকেও পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়েছিল। পরে তাদের ছাড়া হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানায় শিশু সুরক্ষায় লকডাউন চলছে।” পুলিশের তরফে ১৪ দিনের হেফাজত চাওয়া হলেও বিচারক সাত দিনের হেফাজত মঞ্জুর করেন।

Advertisement

এদিন আরামবাগ মহকুমা আদালত থেকে বেরিয়ে সাংবাদিক সফিকুল ইসলাম মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে সাহসের সঙ্গেই বললেন, আমার বিরুদ্ধে যত পারুক পুলিস মামলা দিক, পুলিসের বা শাসকদলের তোলাবাজির খবর আরো বেশি করে করব। আর সেই জায়গা থেকে একচুলও সরে আসবো না। এতটাই দৃঢ়তা দেখালেন তিনি। সফিকুল ইসলাম এখন সাহসি সাংবাদিকতায় এক অদম্য ও অকুতোভয় সৈনিক। সফিকুল ইসলাম যে দমবার পাত্র নন তা পুলিসও ঠাউরে ঠাউরে বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন।

অন্যদিকে স্থানীয়দের অনেকের অভিযোগ, সফিকুলের উপর পুলিশের রাগ অন্য কারণে। তাঁদের বক্তব্য, সম্প্রতি নদী থেকে বালি চুরির সঙ্গে প্রশাসনিক যোগের খবর আরামবাগ টিভিতে দেখানো হয়েছিল। তারপর জেলাশাসক ব্যবস্থা নেন। তাঁদের বক্তব্য, ওই ঘটনার পর পুলিশে বাঁহাতি রোজগার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সেই কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে।

Advertisement